পেকুয়া প্রতিনিধি :: পেকুয়ায় সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড পশ্চিম সিরাদিয়ায় বাঁধ দিয়ে নদী দখলের মহোৎসব চলছে। এ গত ৫ দিন ধরে সদর ইউনিয়নের সোনাজানপাড়ায় কাটাফাঁড়ি নদী দখলের অপতৎপরতা চলছিল। নদীর জেগে উঠা চর ও কাটাফাঁড়ি নদীর পানি স্রোতধারা পর্যন্ত এখন বাঁধ তৈরী করা হয়েছে। এতে করে প্রবাহমান জোয়ার ভাটার কাঁটাফাড়ি নদীটি জবর দখলের মধ্যে পড়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধের বাইরের অংশে গত কয়েক বছর আগে নদীতে চর জেগে উঠেছে। জেগে উঠা চরসহ এর পার্শ্ববর্তী প্রবাহমান নদীর পানি চলাচলের অংশে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম সিরাদিয়ার বাসিন্দা জনৈক আনছার উদ্দিন এ অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থাানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, কাটাফাঁড়ি নদী পেকুয়াসহ উপকুলের ৪ টি ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্য্য বহন করে। বাঁধ দিয়ে নদী দখলের ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পেকুয়ার ৪ টি ইউনিয়নের উপর। বিশেষ করে কাটাফাঁড়ি নদীর উপারে উজানটিয়া ইউনিয়নের অবস্থান। চর ও নদীর দখলের মূল পয়েন্ট হচ্ছে সদর ইউনিয়নের পশ্চিম সিরাদিয়া। এর নিকটবর্তী হচ্ছে উজানটিয়া ইউনিয়নের সুতাচোরার আতরআলী পাড়া ও ঠান্ডা পাড়ার কিছু অংশ। নদীটি গত এক যুগ ধরে বাঁক পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় নদীটি গভীর খরস্রোতা ছিল। বর্তমানে কাটাফাঁড়ি নদীর বিপুল অংশ পলি ও কাঁদা মাটিতে ভরাট হয়েছে।
মগনামা ইউনিয়নের বাইন্যাঘোনা ও সদর ইউনিয়নের পশ্চিম গোঁয়াখালী কাটাফাঁড়ি ব্রীজ থেকে সোজা দক্ষিণে সোনালী বাজার পর্যন্ত গিয়ে পূর্ব দিকে বাঁক পরিবর্তন হয়েছে। এরপর ঠান্ডারপাড়া নাগু ফকিরের মাজার অংশেও বাঁক হয়েছে। উত্তর ও পূর্ব দিকে সিরাদিয়া জেটিঘাট পর্যন্ত গিয়ে স্রোতধারা নদী মাতামুহুরীর সাথে মিশেছে। কাটাফাঁড়ি থেকে সিরাদিয়া জেটিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার কাটাফাঁড়ি নদী ভরাটের মধ্যে পড়েছে।
পশ্চিম সিরাদিয়ায় স্ক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে চরে রিংবাঁধ দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির স্রোত। পানির স্রোতধারা দক্ষিণ দিকে বাঁক নিচ্ছে। জোয়ার ভাটার পানির ধাক্কা লাগছে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন উজানটিয়ার সুতাচোরায়। ওই পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ রয়েছে। সুতাচোরা বেড়িবাঁধেও চলছে এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন কাজ। চলতি অর্থ বছরে ঠান্ডার পাড়া থেকে আতরআলী পাড়া পর্যন্ত ১ কিলোমিটারে বসানো হচ্ছে ব্রিক সলিন। নদী দখলের ফলে বেড়িবাঁধসহ ওই রাস্তাটিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যপারে উজানটিয়া ইউপির ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য এম, ওসমান গণি বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। মাটির বাঁধ দেওয়া হচ্ছে নদীর মাঝখানে এসে। পানির গতি পড়বে সুতাচোরায়। বর্ষার সময় চরম ভাঙ্গন দেখা দেবে। আমার ওয়ার্ডবাসী সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উজানটিয়া ইউনিয়ন আলীগের সাধারন সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, নদী নিয়ে এ ভাবে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যাবে না। একজন জবর দখলকারীর কারণে উজানটিয়াসহ এ অঞ্চলের হাজার হাজার পারেআওয়ামী কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এম, তোফাজ্জল করিম বলেন, এটি চরম ধৃষ্টতা। আমি দেখতে গিয়েছিলাম। রিংবাঁধ দেওয়া হচ্ছে কাটাফাঁড়ি নদীর একদম মাঝখানে এসে। এটি অপসারণ না হলে কাটাফাঁড়ি নদীর অস্তিত্ব বিলীন হবে। মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান মো: ইউনুছ চৌধুরী বলেন, কাটাফাঁড়ি রক্ষা করা আমাদের নৈতিক সংগ্রাম। আসলে নদী হচ্ছে জীবন্ত সত্ত্বা। এ গুলিকে জবর দখল থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
পেকুয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান এম, বাহাদুর শাহ বলেন, বিষয়টি আমাকেও জানানো হয়েছে। আমি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দিয়েছি। এরপরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।
সহকারী কমিশন ভূমি জাহেদুল ইসলাম বলেন, নদী ও চর দখলের বিষয়ে জেনেছি। অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি। অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: